Saturday, 3 October 2020

সোহম ঘোষ


 

অভিলিনের গরমের ছুটি

সোহম ঘোষ


(১)


গরমের ছুটি পড়েছে স্কুলে। অভিলিন মামার বাড়ি গেছে ঘুরতে পশ্চিম মেদিনীপুরের সাঁকরাইল। কাছেই কলাইকুন্দার এয়ারবেস। এবার ক্লাশ এইট থেকে নাইন হল ওর। একে ছুটি, এখন পড়ার চাপটাও কম, তার উপর মা বাবা আসেনি আনন্দেই আছে। অভিলিনের একটা ডাকনামও আছে, ফটিকচাঁদ। তবে সেটা কেবল মামাবাড়িতেই। কিন্তু যেমন ভেবেছিল, তেমনটা হল কই! এবার রনিরা ঘুরতে গেছে নৈনিতাল। তাল মানে তো হ্রদ, নৈনি গিয়ে খুব মজা করছে নিশ্চয়। মামাবাড়ির পাশেই রনিদের বাড়ি। মামাবাড়ি এলে এই রনির সাথেই খেলাটা চলে। ফলে, দু-তিন দিন ধরে খুব একঘেয়েই কাটছে সময়টা। ছোটমামার ঘরে সারাটা দিন কাটাচ্ছে হয় একা একা দাবার চাল দিয়ে বা চাঁদমামা পড়ে। দিদা ভালমন্দ রান্না করে খাওয়াচ্ছে, কিন্তু সময় আর কাটতে চাইছে না।
সাঁকরাইলের অন্য দিকটাই আছে লালগড়, পিরাকাটার জঙ্গল আর এই পুরোটা মিলিয়ে খরগপুর ফরেস্ট রেঞ্জ। এবার মামাবাড়ি গিয়েই শুনল, হাতিদের একটা দল নাকি এসেছে। গোরামামা একদিন দাদুকে বলছিল, প্রায় ৮০-৯০ টা নাকি হাতি হবে, তার মধ্যে আবার ১৫-১৬ টা বাচ্চাও আছে। ওরা থাকে নাকি দলমা ফরেস্ট রেঞ্জ; সাধরনত কংসাবতী নদী পেরিয়ে খাবারের খোঁজে এদিকটায় চলে আসে।
চারদিনের মাথায় গোরামামা যখন কাজ করতে এল সাথে করে নিয়ে এল বুধুয়াকে। বাচ্চা ছেলে, বছর বার বয়স। দেখে তো দাদু গোরা মামাকে এই মারে, সেই মারে। "কোন আক্কেলে তুই ওকে কাজ করাতে নিয়ে এসেছিস? ওর পড়া নেই?"
"ইস্কুল তো ছুটি বুড়োবাবু"
"হলেই বা। ওর কি কাজের বয়স!"
"উ কি সায়েব হবে গো! কামকাজ করবে, বিয়া দিব।"
"তুই ওর স্কুল ছারিয়েছিস তো পিটিয়ে চামড়া গুটিয়ে দেব ব্যাটা রাস্ক্যাল!" ধমকে দিল দাদু। ফলে বুধুয়া হয়ে গেল অভলিনের খেলার সাথী। কিন্ত ছেলেটা না ব্যাট করতে পারে না বল করতে। বলে দিলেও শুধু দাঁত বের করে হাসে। 
"ই বুল হবি নাক ফটিক দাদা।"
"আরে, তুই মনে কর রাবাদা। এইখান থেকে এসে বলটা ছুরে দিবি আমার দিকে। আর আমি বিরাটের মত মারব। বুঝলি?"
দাঁত বের করে, কিন্তু বল আর করতে পারে না। খেলায় মজা আসে না।
দাবা খেলাটা শিখিয়ে দিতে গেল, তাও পারে না ছেলেটা।
তবে একটা জিনিস হয়, গল্প জানে অনেক বুধুয়া। বাহা পরবের গল্প বলে, বলে মারাং বুড়ো আর চাঁদ বুড়োর গল্প। একদিন বলল, "তুই হাতি দেখতি যাবি ফটিক দাদা?"
"হাতি! কোথায়?"
" উ বুনে এয়েছে উয়ারা। রেতের ব্যালা।অনেক গুলা। একটা বুড়া হাতিও আছে, বাকো আতাংলেদিয়া।"
"মানে?" উত্তেজনায় সাঁওতালি বলছিল বুধুয়া।
"উরা উকে দলে লেইলি কো।“

(২)

হাতি দেখে উত্তেজিত হয়ে ওঠে অভিলিন। এর আগে সার্কাসে হাতি দেখেছে, তারা খেলা দেখাচ্ছিল কিন্তু একবারে এত হাতি! ও আর বুধুয়া, ওরা দুজনে শালের জঙ্গলের মুখটাতে দাড়িয়ে আছে। এরপর কিছুটা খালি জায়গা, তারপর ক্ষেতিজমি।ওখানেই আছে দলটা, ৮০-৯০ টা তো হবেই সব মিলিয়ে। এমনিতে এই সময়টাই হাতির দল ফেরত চলে যায় দলমার দিকে, কিন্তু এই বছরটায় কেন জানিনা ওরা রয়ে গেছে। পিরাকাটার দিকে নাকি ছিল দলটা, কাল রাতেই সাঁকরাইলের দিকে এসেছে।
আজ দুপুরে এসে যখন বুধুয়া বলছিল হাতি দেখতে যাবার কথা, সাথে সাথে প্ল্যান করে ফেলেছিল অভিলিন। ডঃ ইয়ান ডগলাস হ্যামিল্টন আর ফ্র্যাঙ্ক পোপের কথা পড়েছে বইতে; আফ্রিকাতে এই দুই ভদ্রলোক হাতিদের বাঁচাতে কাজ করে চলেছেন। প্রতি বছর প্রায় ৩৩,০০০ হাতি মারা হয় আফ্রিকাতে। ও পড়েছে, দাভিদ সেলদ্রিকের কথা। ওয়েন লোটেরের কথা, তাঞ্জানিয়ার মাসাকি জেলায় গত বছরই তাকে মেরে ফেলেছিল চোরা কারবারির দল। আসলে ক্লাসে প্রথম না হলেও বরাবরই বাইরের বইএর দুনিয়ার প্রতি আকর্ষণ অভিলিনের।দুপুরবেলা দাদু থাকে লাইব্রেরীতে, দিদা ঘুমোয়। মামা তো সেই কোন সকালে বেরিয়ে পরে ডাক্তারি করতে খড়গপুর। ওই সময়টাতেই দুজনে বেরিয়ে পরল। একটা পিঠব্যাগ নিয়েছে। দড়ি, জল, বিস্কুট আর টুকটাক কিছু ফার্স্ট এইডের জিনিস আছে ওর মধ্যে।
মামাবাড়ির পিছন থেকেই জঙ্গল শুরু। খুব ঘন নয়, বেশিরভাগ শাল গাছ। পলাশ, মহুয়া আর আম গাছও আছে কিছু। বুধুয়া শর্টকাট গুলো জানে সব। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে আধঘণ্টা হেঁটে ওরা জায়গাটায় পৌঁছাল তখন প্রায় চারটে। পশ্চিম দিকের মাঠটায় দাড়িয়ে আছে হাতিগুলো। সার দিয়ে, মাঝখানে বাচ্চাগুলো। পশ্চিমের আকাশটা কালচে ছাইরঙা হয়ে উঠেছে এর মধ্যেই, ঝড় হবে হয়ত। গাছগুলোর মাথার সবুজটা আকাশের ব্যাকগ্রাউন্ডে অদ্ভুতুরে রঙ নিয়েছে, যেমনটা হয় আর কি। কাছাকাছি লোকজন নেই কোনও। ওদিক থেকে হাওয়া বয়ে আসছে এপাশটায়।অভিলিন পড়েছে, হাতিদের ঘ্রাণশক্তি প্রবল, বাঁচোয়া এটাই হাওয়াটা ওদিক থেকে বইছে।এই ঘ্রাণশক্তির জন্যই কোনও হাতি মানুষের সংস্পর্শে এলে হাতির দল তাকে দলে নেয় না।
বুধুয়া কনুই দিয়ে ঠেলে একটা হাতির দিকে ইশারা করল। এটা একটু আলাদা করে রয়েছে দলটা থেকে। অন্যগুলোর চেয়ে চেহারা অনেক বড়, কুচকুচে কালো গা। বেশ দাঁতাল। হাতিটা দাড়িয়ে আছে মাঠের উত্তরদিকে। একটু বিচলিত যেন, বড় কানগুলো ঘন ঘন নাড়ছে।
তখনই লোকটাকে দেখতে পেল ওরা। জংলাছাপ জামা গায়ে। বড় হাতিটার পিছনদিকের তছনছ হওয়া ক্ষেত থেকে বেরিয়ে এসেছে। হাতে একটা লাঠি, মুখ দিয়ে অদ্ভুত আওয়াজ বের করছে। সাথের ব্যাগ থেকে চকোলেট ব্যোম ছুরে মারল দলটার দিকে। অভিলিন দেখল ঘাড় ঘুরিয়ে, বুধুয়া চোখ বড় করে তাকিয়ে দেখছে। হাতটা চেপে ধরেছে। টিপটিপ করে বৃষ্টি শুরু হল। আওয়াজে দলটা নড়েচড়ে উঠল। সরে যেতে লাগলো বাচ্চাগুলো নিয়ে। কিন্তু বড় দাঁতালটা অনড়। চুপচাপ দাড়িয়ে আছে, দূর থেকে দেখে লাগছে পাথর। ঝড়টা জোরে উঠল। লোকটা হাতির বাকি দল আর বড় হাতিটার মাঝখানে, বড় হাতিটাকে পিছনে রেখে। দলটা দক্ষিণ পশ্চিমের জঙ্গলটার দিকে ঢুকে যাচ্ছে। এমন সময় হাতিটা ঘুরে দাঁড়াল লোকটার দিকে। কিন্তু লোকটার যে খেয়ালই নেই, যে ওর পিছনে হাতিটা দাড়িয়ে।

(৩)

লোকটা বড় হাতিটাকে পিছনে রেখেই এগিয়ে যাচ্ছিল দলটার দিকে। ঝড়টা উঠে এল তখনই। হাতিটা হটাত করেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। মতি গতি ভালো ঠেকল না। চেহারাটা ওর বিশাল। হাতিটাকে নাম দিয়েছে ও ব্রক, এই হাতিটাকে দেখে ওর ব্রক লেস্নারের কথা মনে হচ্ছিল। লোকটা একটুও কিছু বুঝতে পারছে না। হাতে যে খুব বেশি সময় নেই সেটা অভিলিন বুঝতে পারছিল। চিৎকার করে সাবধান করতে হবে লোকটাকে। বড়োজোর পাঁচশো মিটার দুরেই হচ্ছে এসব। হাতিটা গা ঝাড়া দিয়ে উঠল। ধুলো উড়ে একটা কুয়াশা কুয়াশা স্তর করে দিয়েছে। কানের পাশে বুধুয়ার নিশ্বাস পড়ছে, সেটা টের পাচ্ছে ভালোই।
হাতিটা কেমন যেন কাঁধ উঁচু করে আবার গা ঝাড়া দিল। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ক্ষেপে উঠেছে। চিৎকার করে উঠল অভিলিন। লোকটা ঘাড় ঘুরিয়ে পরিস্থিতির গুরুত্ব টের পেল। পরিমরি করে ছুটে এদিকেই আসতে লাগলো। হাতিটাও অত বড় চেহারা নিয়ে কি বিশাল জোরে তাড়া করে আসছে। 
বুধুয়া বলল," ফটিক দাদা, পালা।"
দুজনে পড়িমরি করে পিছন ঘুরে দৌর লাগাল।
এমন সময় লোকটা হোঁচট খেয়ে পড়ল। অভিলিন মানে আমাদের ফটিকচাঁদ আর বুধুয়া দুজনেই থমকে গেল। লোকটা যেখানে পড়েছে সেখানটা পাতা ডাই হয়ে আছে, অসমান। কালবৈশাখীর জোর বেড়েছে, মুখে চোখে পাতা, বালি এসে লাগছে। হাতিটা দৌড়ে এসে দুটো পা একসাথে তুলে পিষে দিল। 
"ই বনবাবুটা মরি গেল রে।"
খুব জোরে চীৎকার করে হাতিটা ফেরত যেতে লাগলো ওই দক্ষিণপশ্চিমের বনের দিকে। এক থেকে দু মিনিট হবে বড়োজোর। ফটিক এগিয়ে দেখতে গেল লোকটাকে। হঠাৎ লোকটা উঠে দাঁড়াল। লোকটাকে উঠতে দেখে বুধুয়া চীৎকার করে উঠল ভয়ে।
"জিন এয়েচে।" বলেই ছুটে পালাল।
ফটিক কিন্তু ভয় পায়নি একটুও, বরং বেশ অবাক হয়েছে। লোকটার কাছে এগিয়ে গেল। কাদা টাদা মেখে একশা। ভয়ে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে লোকটা। ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের লোক। ঝড়ের প্রাথমিক দমকা কেটে ততক্ষণে বৃষ্টি শুরু হয়েছে তোড়ে। অন্ধকার করে সন্ধ্যা নেমে আসছে। লোকটা অভিলিনকে দেখেই বিড়বিড় করতে লাগলো, "ভেবেছিলাম মরেই যাব। গুণ্ডাটা তেড়ে আসলো, আমিও পাথরে লেগে পরে গেলাম। ভয়ে চোখ বুজে ফেলি। চোখ যখন খুলি, দেখি ওটা ফিরে যাচ্ছে। ধুলো ঝড়ে দেখতে পায়নি হাতিটা হয়ত। বড্ড বেঁচে গেছি। বাড়ি ফিরে কালিপুজো দেব। আচ্ছা তুমি কি করছ এখানে?"
"হাতি দেখতে এসেছিলাম।"
"একা?"
"না, আমার বন্ধুও ছিল। ও আপনাকে ভূত ভেবে পালিয়েছে।" হাসল অভিলিন।
"ভূতই বটে। তুমি বুঝি খুব সাহসী?"
লজ্জা পেল শুনে।
" যা হোক, অন্ধকার হয়ে গেছে। চল তোমায় বাড়ি ছেড়ে আসি। তুমি থাক কোথায়? দেখিনি তো আগে।"
"আমি কলকাতা থাকি। এখানে মামাবাড়ি এসেছি বেড়াতে। অমিত রায়চৌধুরী আমার মামা হন।"
"ওহ। ডাক্তার বাবুর ভাগ্নে তুমি?"
কথা বলতে বলতে পা ছালাচ্ছিল দুজনেই।ভিজে নেয়ে চুপসে গেছে। হঠাৎ শুনল দূর থেকে গোরামামা ওর নাম ধরে ডাকছে। অনেকদুরে কে যেন টর্চ হাতে আসছে।

দীক্ষা ভট্টাচার্য


অচীন দেশের খোঁজে

দীক্ষা ভট্টাচার্য


"আচ্ছা তোরা সবাই অচীন দেশের নাম শুনেছিস?"

"অচীন দেশ... কই না তো, ভূগোলের বইতে আমেরিকা দেখেছি, অস্ট্রেলিয়া দেখেছি, নিউজিল্যান্ড ও দেখেছি... কিন্তু অচীন দেশ, সে আবার কোথায়?"

"রাখ তোদের ভূগোল বই, সবই যদি বই এ পাবি তাহলে আর আমার কাছে গপ্পো শুনতে আসা কেন?"

"না, না, ভুল হয়ে গেছে, তুমি বলো অচীন দেশটা কোথায়?"

"হুমম, তা অচীন দেশ যেতে গেলে সাত সমুদ্দুরের মধ্যে তিন সমুদ্দুর আর তেরো নদীর মধ্যে পাঁচটা নদী পার হয়ে ভুশুন্ডির মাঠে নামতে হয়, সেখান থেকে তেপান্তরের মাঠের সোজা ম্যাজিক কার্পেট যায়, তাতে চড়ে সাড়ে সাত মিনিট গেলেই অচীন দেশের পাঁচিল দেখতে পাওয়া যায়, ব্যাস কার্পেট দাঁড় করিয়ে তাতে নেমে পড়তে হবে।"

"পাসপোর্ট, ভিসা কিছু লাগবে না"

"হা হা, না রে, তবে ওখানে যেতে ওখানের রানীর চিঠি সঙ্গে থাকতে হয়, আর সে চিঠি সবাই পায় না, যে পায় সেই যেতে পারে, এবার থাম আর আমায় শুরু করতে দে গপ্পোটা... আজ থেকে অনেক বছর আগে অচীন দেশের রাজা মশাই পড়েছেন বড় বিপদে...


********


অচীন দেশের প্রজারা বড়ই চিন্তায়, তাদের চিন্তা দেখে কোটাল চিন্তায়, সেই দেখে মন্ত্রীমশাই চিন্তায়, শেষে সব দেখে রাজামশাই মহা চিন্তায়। আসলে হয়েছে কি, রাজা মশাই এর বিয়ে হয়েছে তা বছর চারেক কিন্তু এখনো রানী মায়ের কোল আলো করে রাজকুমার এলনা। রাজ বৈদ্যের পথ্য থেকে রাজ পুরোহিতের পুজো কিছুতেই কিছু লাভ হয়নি। তা ও যদি আর কয়েক বছর আগের ব্যাপার হত রাজামশাই টুক করে রানীমা কে দুয়োরানী বানিয়ে সুয়োরানী কে বিয়ে করতেন। কিন্তু দেশের আইন কানুন যা কড়া হয়েছে তাও এখন সম্ভব নয়। অগত্যা দেশ বিদেশে রাজার দূত ছুটল উপায় জানতে।


তেপান্তরের মাঠ পার হয়ে আজবগড়ে যাওয়ার পথেই ব্যঙ্গমার সাথে দূত মশাই এর দেখা। প্রথমে তো দূত বাবু কিছু বলতেই চাইছিল না, তবে ব্যাঙ্গমা ও কি ছাড়ার পাত্র, ঠিক পেট থেকে খবর বের করল। তারপর তো জানা গেল ব্যাঙ্গমীর ও নাকি এই এক ই সমস্যা ছিল, দূতের কানে কানে কি সব শলা ও দিল বলে। দূত তো সব শুনে বেশ খুশি হয়েই আবার অচীন দেশের উদ্দেশ্যে নিল ইউ টার্ন, মনে আশা যে এই টোটকায় কাজ হলে রাজা মশাই একেবারে খুশি হয়ে আধা রাজত্বই না দিয়ে দেন।


দূতের বলে দেওয়া টোটকা মত রানীমা তো রোজ ভোর বেলা সূয্যি মামা উঁকি দেওয়ার আগে চোখে কাপড় বেঁধে ঘুম থেকে উঠে একটা পাকা আম কে দু আধখানা করে এক টুকরো নিজে আর এক টুকরো রাজা মশাইকে খাইয়ে তবেই চোখের কাপড় খুলতেন।


এক মাস যেতে না যেতেই রাজ বাড়িতে হইহই, রানীর কোল আলো করে রাজপুত্তুরের আসার খবর শুনে রাজামশাই তো দূতের নামে পাঁচটা গ্রাম ই লিখে দিলেন।


দেখতে দেখতে দিন কাটে, অপেক্ষার দিন ও এগিয়ে আসে, প্রজাদের সঙ্গে রাজা মশাই ও উদগ্রীব অপেক্ষায় নতুন কুমারের জন্য।এরই মধ্যে ধাইমা ভেতর থেকে এসে জানান রানীমার সন্তান জন্মানোর খবর। 


কিন্তু এ কি, যে খবরে সারা রাজ্য জুড়ে আনন্দ উৎসব হওয়ার কথা ছিল তা শোনার পর আরো অন্ধকার কেন নেমে এল?মন্ত্রিমশাই মাথায় হাত দিয়ে অমনি বসে পড়লেন কেন নিজের আসনে। দূত ভায়া ও কেমন মানে মানে কেটে পড়ার তালে আছে মনে হচ্ছে... আর রাজা মশাই....


রাজমশায়ের মনে তখন অন্য ঝড়, আরে এর থেকে ভালো বুম্বাগড় এর রানীর মত যদি তার রানী কুকুর বিড়ালের জন্ম দিতেন, তা ও বোঝা যেত কোনো শাপ পড়েছে, পরে না হয় তারা রাজপুত্র হয়ে রাজ্য দেখভাল করত.... তাই বলে কন্যাসন্তান... এ কি অনাসৃষ্টি কান্ড রে বাবা।


রাজার রোষে দূতের প্রাণ যায় যায়, কান টানলে মাথা আসার মত ব্যাঙ্গমা কে ও ধরে আনা হয়েছে, সে তো সব শুনে সোজা বলে দিল দূত শুনতে ভুল করেছে, চোখের বাঁধন রাজা মশাই কে বাঁধতে হত রানীমা কে না।


এই বলে সে তো ফুড়ুৎ


এই সব গোলমালের মধ্যেই আসতে আসতে বড় হতে থাকল রাজকুমারী আয়না, ততদিনে তার একটি ভাই ও হয়েছে, রাজকুমার দর্পণ। পরের বার আর রাজামশাই ভুল করেননি আর কি।

তা দর্পণ বয়েসে কচি হলেও তার বিক্রম দেখার মত, ছোটো থেকেই মেঘ না চাইতে জল পেলে যা হয়। দিদি তো দূর,মায়ের কথাও সে কানে নেয় না। বাবা কে খানিক মেনে চলে বটে, তবে বাবারই বা ছেলে কে শাসন করা হয় কোথায়।


এদিকে রাজকুমারী আয়না কিন্তু রূপে লক্ষ্মী গুণে সরস্বতী, রাজা মশাই কিন্তু মেয়েকেও এখন ভালোই বাসেন। কিন্তু ওই খেতে বসে বেশি ভালোটা ভাইয়ের পাতে, আর দামী খেলনাগুলো ভাইয়ের দেখতে দেখতে আয়নার ও অভ্যেস হয়ে গেছে।


এরই মধ্যে একদিন 'আলখ নিরঞ্জন' বলতে বলতে এক সাধুবাবা এসে হাজির রাজার দুয়ারে, প্রথমেই তিনি দর্পণের সামনে, ঝুলি বাড়িয়ে যেই না ভিক্ষা চেয়েছে সে করেছে কি দিচ্ছি সাধুবাবা বলে রসুই খানা থেকে মাছ এনে সোজা সাধুর ঝোলায়।


ব্যাস... আর যায় কোথায়, সাধুবাবা তো রেগে কাই, হয়তো দর্পণকে ভস্মই করে দিতেন, নেহাৎ ছোটো বলে তা না করে শাপ দিলেন 


"দুরাচারী শিশু ওরে বলি তোরে শোন

এখনো সময় আছে বাঁচাতে জীবন

সবাইরে সবসময় করিস অশ্রদ্ধা

ভেঙে গুড়িয়ে যাক তোর এই স্পর্ধা"


ব্যাস, প্রতাপ একেবারে সঙ্গে সঙ্গে কেমন ভেঙে চুরে গিয়ে অষ্টাবক্র মুনির মত বেঁকে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। এদিকে রাজকুমারী আয়না ঠিক ওই সময়েই ওদিক দিতে যাচ্ছিল, ভাইয়ের শাপ পাওয়া দেখে সে তো ছুটে এসে একেবারে সাধুবাবার পায়ে, অনেক কাকুতি মিনতি করে তার রাগ একটু কমের দিকে, কিন্তু দর্পণ কে আগের মত সুস্থ স্বাভাবিক করতে তিনি নারাজ। এদিকে রাজামশাই, রানীমা সব ছেড়ে ছুটে এসেছেন। 


সবার কান্নাকাটির মাঝে সাধুবাবা রাজা মশাই কে বলে উঠলেন,


"হে রাজন, রতন ঘরেতে তোমার, চিনিতে নাহি পারো

হীরা ফেলে কাঁচ টুকরাকে করো যে ধারালো

পুত্র আর কন্যাতে যে নাই ভেদাভেদ

মনুষ্যেতর পশুও করেনা এই ভেদ"


সাধুবাবার কথা শুনে রাজমশায়ের মাথা হেঁট হয়ে যায়, তিনি কিছু বলার আগেই সাধুবাবা বলে ওঠেন তিনি দর্পণ কে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেবেন যদি রাজামশাই রাজি হন রাজকুমারী আয়না কে সমান অধিকার দিতে...


রাজামশাই ও আর উপায়ন্তর না দেখে রাজি হয়ে যান, আর সেই থেকেই আয়না আর দর্পণ সমান সমান। এমনকি দুজন বড় হলে প্রজাদের ভোটাভুটি হয়ে রাজকুমারী আয়নার হাতে এল অচীন দেশের রাজ্যপাট। তার রাজত্বে প্রজারাও সুখে, রাজা রানিমা এখন দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ান ম্যাজিক কার্পেটে চড়ে।


আর দর্পণ কুমার, তিনি এখন তার দিদির চিফ এডভাইজার, দুজনে মিলে দিব্যি সামলায় সবকিছু।


********


"তারপর, তারপর কী হল?"

"তারপর নটে গাছ টি মুড়োলো, এবার যা তোরা, আবার কাল নতুন গপ্পো শোনাবো"

বাচ্চাগুলির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসতে গিয়েও আটকে যায়

"কি রে বাবলি, বাড়ি যাবি না?"

"ধুর গেলেই মা ঘরের কাজে লাগিয়ে দেবে, এদিকে ভাইকে দেখো... গল্পদিদা ওই সাধুবাবাকে আমার বাড়ির ঠিকানা দিয়ে দেবে গো?"


বাবলি কে জড়িয়ে ধরে বুকে ভাঙন ধরে পাড়ার সবার প্রিয় গল্পদিদার, সত্যিই তো এই সাধুবাবার খোঁজটা যদি জানা থাকতো, যে এক নিমেষে জাদু কাঠি বুলিয়ে সব ভেদাভেদ মিটিয়ে দেবে... দেশটা সত্যিই রূপকথার অচীন দেশ হয়ে যেত।


আপনি জানেন না কি সেই সাধুবাবার খোঁজ?

সৌজন্য চক্রবর্ত্তী


বারীন বাবুর বুড়োমি

সৌজন্য চক্রবর্ত্তী


                  বারীনবাবুর হয়েছে বেজায় বিপদ। দাঁত গুলো যে এরকম বেইমানি করবে তাঁর সাথে তিনি ভাবতে পারেননি। সত্তরের কোঠা পার হতে চললো অথচ দাঁত গুলো দেখো দিব্যি খোশমেজাজে মুখের ভেতর আস্তানা গেড়ে বসে আছে। কিছুতেই পড়তে চায় না। 

বারীনবাবু তাঁরই প্রাণের দোসর সুবীরবাবুকে আজ সকালে চা খেতে খেতে বলছেন," এ কি জ্বালা হয়েছে বাপু দাঁত গুলোকে নিয়ে, খেতে, শুতে, বসতে মুখের ভেতর জোঁকের মত চিটিয়ে আছে অষ্টপ্রহর! সত্তর বছর পার হতে গেলো, বল দেকি।"

সুবীরবাবুর বক্তব্য,"আহা, এতো ভালো জিনিস, আমায় দেখ, সে কোন কালে অর্ধেক দাঁত বিদেয় জানিয়েছে। তোর তো খুশি হবার কথা।"

বারীনবাবু বললেন,"খুশি না ছাই। আচ্ছা বুড়ো হলাম কিজন্য বলি, সারাজীবন যদি বেয়াক্কেল দাঁত গুলো থেকেই গেলো, তাহলে এত কষ্ট করে বুড়ো হওয়ার কি মানে! পাড়ার বেয়াদপ ছোকরাগুলো পর্যন্ত রাগায়, জোয়ান বলে।"

সুবীরবাবু আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করে, "আচ্ছা , তোর কি মাথাটাতা বিগরোল নাকি, না মতিভ্রম?

ভালই তো এখনও সব চিবোতে পারিস। শক্ত দাঁত নিয়ে গর্ব করবি কোথায় তা না..."


..."তা না…" কথা কেড়ে নিয়ে বারীনবাবু নাকি সুরে বললেন,"... জানিস এই বিটকেল দাঁত গুলোকে বিদেয় করতে কত কি না করেছি। গোপাল ডাক্তারের কাছে তিন মাস হোমিওপ্যাথি ট্রিটমেন্ট করিয়েছি। তাতেও না পড়ায়, ও পাড়ার কোবরেজ মশাইয়ের দেওয়া টোটকা, পুরিয়া তিনবেলা স্নান করে দাঁতে লাগিয়ে তারপর জামরুল পাতার সাথে গোলমরিচ আর শুকনো সাজিমাটি বেটে ঘসেছি  চল্লিশ বার। উল্টে তাতে দাঁতের জৌলুশ যেন আরো চোদ্দো গুণ বেড়ে গেলো।"

সুবীর বাবু হাসতে হাসতে বললেন," তুই পাগল..." 

"....তারপর শোন, বিশু রাখালের কথা মত চিনেমাটি, কাঁচা হলুদ এমনকি সিমেন্টের ইঁট পর্যন্ত চিবোতে বাদ রাখিনি । তাতে দাঁত গুলো যেনো আরো শক্ত হতে আরো ভালোভাবে এঁটে বসলো। 

এই নিয়ে গিন্নির সাথে কি কম ঝগড়া হয়েছে?

ছেলেটাও শেষে বুঝিয়ে পারেনি!

এখন কি যে করি..."বারীন বাবু গম্ভীর হয়ে বলে চললেন।



এতক্ষণ পড়ে মনে মনে ভাবছেন তো, এ তো আচ্ছা পাগলের পাল্লায় পড়া গেলো। বারীনবাবুর নির্ঘাত মাথার ব্যামো। নইলে কেউ এই বয়সে দাঁত পড়েনি বলে রাগ করে! কিন্তু বারীনবাবুর দাঁত এর প্রতি আক্রোশের কারণ তাঁর নিজের তৈরি অদ্ভুত ধারণা...


         ...তিনি ভাবেন এই তিনকাল গিয়ে চারকালে এসে ঠেকেছেন। এখন যদি দাঁত না পড়ে, তাহলে ছেলে, বৌমা, নাতি নাতনিরা কি বলবে!... "বুড়ো ভাম, এখনও দাঁতের বাহার দেখো না!" আর তা ছাড়া নাতনি দুটো বিচ্ছু হয়েছে, ওদের বোঝানো মুশকিল যে উনি বুড়ো হয়েছেন, এই বয়সে অমন রাম চিমটি কাটলে কার না লাগে, বোঝাতে গেলে ফ্যাচ ফ্যাচ করে হেসে বলে, "দাদু, তোমার তো দাঁতই পড়েনি, ফোকলা না হলে কিসের বুড়ো।"

বলো দেখি এরকম অপমান তাও আবার হাঁটুর বয়েসি বাচ্চার কাছে। ছ্যা ছ্যা...


                                       তারপর থেকেই ঠিক করলেন এই দাঁত রাখা যাবে না। যেকোনো উপায়ে হটাতে হবে। কিন্তু কে কার কথা শোনে। দাঁত বাবাজি দিব্যি হাঁক পাড়িয়ে বসে রইলেন তেমনি দেমাকে। 

এদিকে ঘুমের মধ্যেও বারীনবাবু দেখেন দাঁত গুলো সব মুখের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে তাঁর দিকে তাকিয়ে হ্যা হ্যা করে হাসছে আর বলছে,"বুড়ো হবি? বুড়ো হবি?"

কি লজ্জা!

এভাবে আর থাকা যায় বলো?

কিন্তু দাঁত তোলাতে বললেও আবার উনি ভয় পেয়ে মানা করেন, এই বয়েসে দাঁত তোলালে যা যন্ত্রণা তা উনি সহ্য করতে পারবেন তো!

              কিন্তু কি আর করা যায়! তাঁকে বোঝাতে বোঝাতে একে একে বন্ধু সুবীর, এমনকি বউ মালতীও তাকে ছেড়ে চিরদিনের মত চলে গেলেও দাঁত গুলো যেতে চাইলনা, তাঁর প্রতি একটু বেশিই মায়া জন্মে গেছে বোধহয় দাঁতগুলোর। 

এ কেমন রাক্ষুসে প্রেমরে বাবা!

পঞ্চাশ বছর ধরে স্কুলের টিচার এর মাইনা আর পেনশন জমিয়ে বেশ ভালই টাকা পয়সা করেছিলেন বারীন বাবু। একটু কিপটেও ছিলেন বোধহয়। কিন্তু দাঁত সরাবার জন্য সব খরচা করতে রাজি ছিলেন তিনি।


            যাইহোক, একদিন ছেলে আপিসের কাজে বাইরে, আর বৌমা, নাতি-নাতনীদের নিয়ে বাপের বাড়ি যাওয়ার সুযোগে একা পেয়ে ডাকাত পড়লো তাঁর বাড়িতে। তাঁর হাত পা দুটো বেঁধে সিন্দুকের চাবি ভেঙে টাকা পয়সা, গয়না-গাটি সব নিয়ে চলে যাচ্ছিলো ডাকাতের দল। সারারাত ওই ভাবে পড়ে থাকলে নির্ঘাত মারা যেতেন বারীনবাবু। 



কিন্তু কে জানত, সেই চির শত্রু দাঁতই বড়ো বন্ধু হয়ে দেখা দেবে তখন। দাঁত দিয়ে দড়ি কেটে মুক্ত হয়ে, চট করে টেলিফোনটা করে থানায় না জানালে ডাকাতের দল ধরাও পড়তো না, আর তাঁর সাধের সম্পত্তিও সব চলে যেত।


         বারীনবাবু দেখলেন দাঁত গুলো এখনও দিব্যি মজবুত আছে। তাছাড়া ক্ষতি তো কিছু করছে না, বরং উপকারই করেছে। এবার থেকে বুক ঠুকে পাড়ার ছোকরা গুলোকে বেশটি করে বলে দেবেন,"দেখ, এই বয়সেও তোদের মত লোহার কড়াই চিবিয়ে খেতে পারি।"

আর নাতি নাতনিদের খুনসুটি না হয় একটু ভালোবেসে সহ্যই করে নেবেন বারীনবাবু।


          ... যাক, এতদিনে বারীনবাবুর মতি ফিরেছে। ছেলেকে ডেকে বললেন,"হ্যাঁ রে বাবলু, বুঝলি, আমি ঠিক করেছি দাঁত গুলোকে আর তোলবার চেষ্টা করব না, ওরা না হয় থাক ওদেরই মত।"

সেমন্তী ঘোষ


ত্রিবেণী সঙ্গম: কন্যাকুমারী  

সেমন্তী ঘোষ


"...দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে, যাবে না ফিরে

এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে..."


পূণ্যভূমি ভারত বৈচিত্রের মিলনতীর্থ। ঐক্যের সাধনাই তার শাশ্বত সাধনা। বিমিশ্র বিচিত্র সংস্কৃতির সাথে রূপের বাহারে অনন্য তার রূপ। সেই রূপের ডালি আলোকিত করে তোলে আমাদের জ্ঞানভান্ডার। অজানাকে জানার অচেনাকে চেনার মধ্য দিয়ে উন্মোচিত হয় জ্ঞানচক্ষু। শুধুমাত্র পুঁথিগত শিক্ষায় আবদ্ধ না থেকে প্রকৃতির মাঝে নব নতুন কর্মসূচির সাথে মেলবন্ধন ঘটে আমাদের।


ভারতের শেষ বিন্দু কন্যাকুমারী― আরব সাগর, বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরের ত্রিবেণী সঙ্গম। শৈশবকালের ভূগোল বইয়ের পাঠ্য উত্তরে কাশ্মীর থেকে সুদূর দক্ষিনের কন্যাকুমারী চির আকর্ষণীয়। প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে নিয়ে এবারে আমাদের যাত্রা সেই কন্যাকুমারীতে। কাজের সূত্রে আমাদের বহুবার যাওয়া হলেও ওদের অনেকের কাছেই এটা প্রথমবার। তাই প্রত‍্যেকের চোখ-মুখ আনন্দ, উত্তেজনায় পরিপূর্ণ।

হাওড়া থেকে কন্যাকুমারী এক্সপ্রেস এ করে যাওয়া যায় কন‍্যাকুমারী অথবা হাওড়া থেকে চেন্নাই গামী যেকোনো ট্রেনে চেন্নাই গিয়ে  সেখান থেকে কন্যাকুমারী পৌঁছানো যায়। শালিমার নাগেরকোয়েল গুরুদেব এক্সপ্রেসে চেপে পৌঁছাতে পারেন নাগেরকোয়েল। সেখান থেকে কন্যাকুমারী দূরত্ব আনুমানিক ২০ কিলোমিটার।এছাড়াও কলকাতা থেকে ভায়া চেন্নাই হয়ে বিমানে ত্রিবান্দম এসে সেখান থেকে কন্যাকুমারী পৌঁছানো যায় দূরত্ব আনুমানিক  ৯০ কিলোমিটার। আমাদের যাত্রা ছিল হাওড়া কন্যাকুমারী এক্সপ্রেসে।


দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু জেলার উপকূলীয় অঞ্চল কন‍্যাকুমারী সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। বহু বাঙালির দেখা মিললেও এখানকার আধিকারিক ভাষা তামিল। ২০১১ সালের জনসংখ্যা অনুযায়ী এখানকার লোকসংখ্যা ২৯৭৬১ জন। এসব গল্প দিয়েই শুরু হলেও দীর্ঘ তিন দিনের ট্রেনযাত্রা। বেশ কিছুক্ষণ গল্প করার পর সাথে নিয়ে যাওয়া খাবার খেয়ে শুয়ে পড়া হলো। কয়েকজন দুষ্টু-মিষ্টুর রাত্রি জাগরণের ইচ্ছা থাকলেও  দিদির বকা খাওয়ার ভয়ে দেখলাম সবাই নিদ্রামগ্ন। কিন্তু পরেরদিন সকাল হতেই  উঠে আবার তাদের বায়না দিদি কন্যাকুমারীর গল্প বলো... স্নেহের প্রিয়দের আবদারে তাই আবার শুরু করলাম পুরাণ অনুযায়ী দেবী কন্যাকুমারীর নামানুসারে এই অঞ্চলটির নামকরণ হয়েছে কন্যাকুমারী। তপস্যারত 'মহাশক্তি মহামায়া' ধ্যানমগ্না কন্যাকুমারী শিবের জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় দেবতাদের কৌশলে বধ করেছিলেন বানাসুরকে। তারপর আবার সেই ত্রি-সঙ্গম  কুমারিকায় চিরকুমারী মগ্ন হয়েছিলেন চিরবাঞ্চিত দেবাদিদেবের ধ্যানে। তখন থেকেই পবিত্র তীর্থভূমি কন্যাকুমারী রূপে খ্যাত। শুধু তাই নয় ত‍্যাগ ও সাধনার মূর্ত প্রতীক স্বামী বিবেকানন্দ সাঁতরে কন্যাকুমারী পৌঁছে এখানেই ধ্যানে মগ্ন হয়ে দেশবাসীর ভূত ভবিষ্যতের চিন্তায় নিমজ্জিত  হয়েছিলেন। দিনটি ছিল ২৪শে ডিসেম্বর ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দ। শোনা যায় ২৫ থেকে ২৭শে ডিসেম্বর শ্রী পাদপারাই  প্রস্তরখন্ডের উপর বসে তিনি নিজের জীবনের উদ্দেশ্যের সন্ধান পেয়েছিলেন। পরবর্তীকালে তারই স্মারক হিসেবে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল। এসবের সাথে মনোরমা প্রকৃতির অপরূপ শোভা তো রয়েছেই।এভাবেই গল্পে ছবি দেখে তিন দিন অতিবাহিত। পৌঁছে গেলাম কন্যাকুমারী। যার স্থানমাহাত্ম্যে দেহ মন উদাস হয়। পবিত্র করে তোলে অন্তরাত্মা কন্যাকুমারীর আকাশ বাতাস। তিনদিনের দীর্ঘ জার্নিতে দুপুরটা বিশ্রাম নিয়েই কাটলো। বিকালে যাওয়া হল সমুদ্রের ধারে। আসমানী নীল কার নীলাভ্র জলে মোহময়ী রূপের ছটা।সাগরতটের উদাসিয়া সুর। সিঁদুর রাঙা অস্তগামী সূর্যের রক্তিম হাসিতে গোধূলিবেলার ঝিরঝিরে সমীরন― 

নীলাভ আকাশতটে দুর্লভ জ্যোতি

দুরন্ত দুর্বার অসীমের গতি...

দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশির অসীমের মাঝে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে মুহূর্তকে মুহূর্ত বন্দি করে হোটেলে ফেরা হল। পরেরদিন প্রভাতে হোটেলের ছাদ থেকে  দেখা গেল সূর্যোদয়ের অপরূপ দৃশ্য। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা রেডি হয়ে বেরোলাম বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল এর উদ্দেশ্যে। কন্যাকুমারী থেকে সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত ভেসেল চলে বিবেকানন্দ রকে যাওয়ার জন্য। সকাল থেকেই সেখানে সুদীর্ঘ সারিতে জনমানবের ঢল। লাইনে দাঁড়িয়ে দেখলাম বেশ কিছু জন এগিয়ে চলেছে কন্যাকুমারী মাতার মন্দির দর্শনে। আমরা এগিয়ে গেলাম ফেরিঘাটের দিকে। লাইফ জ্যাকেট পড়ে ভেসেলে উঠে ১৫ মিনিটের ব্যবধানে উজানের হাওয়ায় দুলতে দুলতে পৌঁছে গেলাম বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল। আনুমানিক চার একর জমির ওপর ২০৮১ দিনের প্রচেষ্টা ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল।

সেখানে রয়েছে বিবেকানন্দের একটি সৌম‍্য মূর্তি; যেটির অঙ্কন নির্মাণ করেছিলেন সি.এস.এম পন্ডিত এবং মূর্তিটির নির্মাণকার্য সম্পন্ন করেছিলেন  জে. জে. স্কুল অব্ আর্টস এর সি.এন.এল. সোনাভাদোকর।মূর্তি ছাড়াও এখানে একটি প্রার্থনা গৃহের সাথে রয়েছে বেশকিছু পুস্তক বিপণি। স্থাপত্য ভাস্কর্য কলার অপূর্ব নিদর্শন এটি। রক মেমোরিয়াল এর বিপরীতে দেবী কন্যাকুমারীর একটি পায়ের স্মারক শিলাখণ্ড রূপে রয়েছে। ভিতরের ছবি তোলা নিষিদ্ধ হওয়ার জন্য বাইরে থেকে ফ্রেমবন্দি করে বিবেকানন্দ রকে দাঁড়িয়ে আরব সাগর ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের মিলনস্থলটি প্রাণভরে দেখলাম।  তিনসাগরের উত্তাল ঢেউয়ে বেলাভূমিতে দূরন্ত হাওয়ায় মনে নিয়ে এল এক নতুন সজীবতা। অদূরেই দেখলাম তামিল চারণকবি তিরুভাল্লুবরের ১৩৩ ফুট উঁচু মূর্তি। নির্দিষ্ট সময় শেষে ভেসেলে করে হাওয়ায় দোল খেতে খেতে  আবার ফিরে আসলাম এপারে। এবারে যাওয়ার পালা তিনসাগরতীরের সুন্দর মন্দির কন্যাকুমারীতে। ফেরিঘাট থেকে পায়ে হাঁটা দূরত্বে পৌঁছে গেলাম মন্দির। সেখানে পুজো দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। পুরান প্রসঙ্গটি এই মন্দির কে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। পদ্মের উপর দণ্ডায়মান গ্রানাইট পাথরের দেবীমূর্তি চিত্তাকর্ষক। 'তিন দিকের তিনরঙা অনন্তের আঁচল গায়ে টেনে আকাশমুকুটিনী  ভারত কুমারী অসীমের পানে তাকিয়ে'। দেবীর নোলকের হীরকখণ্ডের দ‍্যুতি বহুদূর থেকেও দৃশ‍্যমান। পূজা দিয়ে মন্দির দর্শন শেষে হোটেলে ফিরে নিজের মত করে মনের ভাব ফুটিয়ে তোলার চেষ্টায় প্রত‍্যেকেই ব‍্যস্ত। কেউ কবিতা লিখে দিয়ে গেল তো কেউ লিখতে শুরু করল বিবেকানন্দের দৃষ্টিকোণ নিয়ে। আর আমরা মনোনিবেশ করলাম প্রকৃতির মায়াতানকে ক্যামেরাবন্দি করতে। দুপুরের আহার শেষে ইতিহাস প্রসিদ্ধ ভাট্টাকোটাই ফোর্ট, গান্ধীজীর চিতাভস্ম বিসর্জিত গান্ধীমন্ডপম দেখে সন্ধ্যেবেলা কাটল লেডি অফ রনসম চার্চে। চার্চ থেকে বেরিয়ে পায়ে হেঁটে ঘুরে আসা হলো মন্দির প্রাঙ্গণের সামনে পযর্ন্ত। বেশকিছু দোকান রয়েছে সেখানে শাড়ী, কন‍্যাকুমারীর পটচিত্র, ঘর সাজানোর সামগ্রীর। হোটেলে ফিরে ডিনার শেষে গুছিয়ে নেওয়া হল জিনিসপত্র। প্রকৃতির আবিলতায় আশ্চর্য স্বপ্ন বিন্দুতে তিনদিন কাটিয়ে অপার শান্তি ও অনাবিল আনন্দ নিয়ে রওনা দিলাম কলকাতার উদ্দেশ্যে... মনভোলানো চোখ জুড়ানো সেই সৌন্দর্য‍্য একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে হৃদয়ে চিরআসীন হয়ে রইল।

সঞ্জীব দত্ত


আশুর মাথাব‍্যথা

সঞ্জীব দত্ত


মাথা ব‍্যথায় ভোগেন আশু

দিবারাত্রি কাল

শুধুই বলেন মাথাব‍্যথা

ছেড়ে দিয়েছেন হাল।


অনেক ডাক্তার, বদ‍্যি এলেন

আশুর মাথাব‍্যথা কমাতে 

কিচ্ছুটি কাজ হল না 

একটু শান্তি পেতে।


হঠাৎ একদিন নস‍্যি নিয়ে 

আশু নাকের কাছে টানে 

মাথাব‍্যথা চিরকালের জন্য 

উবে গেছে আকাশপানে।

অভিজিৎ মান্না


অদ্ভুত ভূত

অভিজিৎ মান্না


একটা ভূত ভীষণ মজার

একটা ভূত গম্ভীর

একটা ভূত চালাক ভারি

একটা ভূত ধীর।

একটা ভূত সুযোগ খোঁজে

একটা ভূত রাগী

একটা ভূত শান্ত বেজায়

একটা ভূত দাগী।

এমনি করে কাটে তাদের

একটা সংসারে

মানুষগুলো প্রাচীর তোলে

একটা দুয়ারে।

প্রিয়তোষ


বন্ধু রে

প্রিয়তোষ


বন্ধু রে, 

চল আরেকটিবার না হয় ঘুরেই আসি।

হাতটা তোর রাখবো কাঁধে, চলব দুজন পাশাপাশি।

কাঁধে কাঁধ মিলবে আনন্দে আবার, ছন্দে মেলাব দুইটি পা,

আজ খুশিতে বাঁধন দেবে, কেউতো নাই, যথা ইচ্ছা তথা যা।


বন্ধু রে,

তোর মন খারাপের রাতটি জুড়ে, একলা আকাশ দেখবি যখন,

একটিবার ডাকিস জোরে আমায়, ঠিক আসব দেখিস, দৌড়ে তখন।

তোর মনের ভিতর রঙিন স্বপ্ন

রংগুলি যদি হারিয়ে ফেলে,

দেখবি মনটা আবার রঙিন হবে, 

আমি ভালোবেসে একটি হামি খেলে।


বন্ধু রে, 

দুঃখের কালো মেঘগুলি, যদি জীবনটা তোর আঁধার করে,

চিন্তা নেই, ঠিক সরিয়ে দেবো, ভরসা রাখিস আমার উপরে।


বন্ধু রে,

বন্ধু শব্দটা বড্ড ছোট

আমি তো তোর ভাই-টা ছিলাম,থাকবো, আছি

তুই ছাড়া তো জীবনটা অসমাপ্ত

চল না, একত্রেই চিরটাকাল বাঁচি।

বর্ণা দত্ত

 

ভূগোল

বর্ণা দত্ত


নদীর পাড়ে নিমগাছটায় থাকি বহালতবিয়তে

নামটি আমার পারো জানতে 

একটুখানি খাটালে মগজটাকে!

দেখছো চোখদুটো আমার কেমন বড়ো বড়ো?

যেন আগুনের গোলা!

মুখের হা টা দেখো দেখতে পারছো?

যেন আস্ত একটা বিড়াট মাপের গোল

সব কিছুই তো আমার মুখের ভিতর,


দেখছো কপাল জুড়ে টিপটা আমার

রাত্রি হলেই ওঠে জ্বলে,

অবশ‍্যি সব রাত্রিরেই নয়,


গাল দুটো তো পাহাড়, মালভূমি

তাতেই আমার নড়াচড়াই 

টিপটা পরে মাঝে মাঝে,

বুকের ছাতি বিড়াট মাপের

দুনিয়া জোরা আকাশ

সেখানে থাকে জ্বলন্ত আমার চোখ অহর্নিশি,


ঠ্যাংজোড়া তো জগৎময় এক একটা সমুদ্দুর!

নখগুলো সব নদ-নদীরই শিরা উপশিরা

হাতদুটোতে আছে ধরা

পুরো একটা গোটা ভূগোল।

বাপ্পা দাস


পুজোর আমেজ 

বাপ্পা দাস 


ঘাসের ডগায় ভোরের শিশির 

চিকচিক করে জ্বলে, 

নদীর পাড়ের কাশ বন

হাওয়ায় কেমন দোলে,

শিউলি ফুলের গন্ধ মেখে

মন যে মাতোয়ারা, 

পুজোর সাজে উঠছে সেজে 

গ্রাম-শহর-পাড়া।

সুনন্দ মন্ডল

 

মহালয়া ভোর

সুনন্দ মন্ডল


ওই দেখ, গুনগুন করে মেঘ

শারদ আনত তলে।

কাশের গোড়ায় হাসির রেখা

শিউলিও কত দোলে।


মহালয়া ভোর, উঠবি কখন?

শুরু হয়ে গেল টিভি।

আয় আয় বোস, এইখানে

একসাথে দেখি ছবি।


ঘুম ভাঙা চোখ, উঠে পর দেখি

দাদু কিংবা ঠাম্মার কোলে।

প্রতি মহালয়া যেভাবে আসে  

শারদ চাদর গায়ে তোলে। 


মা দুর্গা সেজেছে দেখ, 

লক্ষ্মী গণেশ কেমন লাগে?  

সুরের তালে গান বয়ে যায়  

ভয়ে অসুর কেমন ভাগে? 


সিংহের হুংকার ভয় লাগে কি?

ওই দেখ, ওদিকে ময়ূর নাচে।

মায়ের দশ হাত ধরেছে অস্ত্র

মহিষাসুর কুপোকাত তারই ঘায়ে।

সুশান্ত দত্ত

 

খোকার পুজোর প্রস্তুতি

সুশান্ত দত্ত


দূরের থেকেই দেখবো মাকে

মুখ নিয়ে ঢাকা।

মেলায় গিয়েও থাকতে হবে

একটু ফাঁকা ফাঁকা।।


বাবা মায়ের সঙ্গে যাবো

ছাড়বো না তাদের সাথ।

এদিক ওদিক ছুঁবো না কিছু 

নিবো না মুখে হাত।।


বাইরে খাবার খাবো না এবার

করবো না আর বায়না।

থাক না যতই মনের মতো

আমার কিছুই চাই না।।


ফটকা বেলুন থাকনা এবার

আগের বছর নেবো।

প্রণাম করে বলবো মাকে 

আমাদের নিয়ে ভেবো।।

শম্ভু সরকার


উৎসবের কথোপকথন

শম্ভু সরকার


আকাশ জুড়ে নীলের মেলা সাদা মেঘের ফাঁকে

দিগন্তে ঐ কাশের দোলা শরৎ ছবি আঁকে।

শরৎ মানেই বছর ঘুরে আগমনী গান

মহালয়ার হিমেল সুরে মন করে আনচান।

মন মেতেছে ঢাকের তালে এলো খুশির দিন

আয় ছুটে সব এই সকালে নাচবো তা ধিন ধিন।

নাচবো সবাই পুজোর দিনে সাজবো নতুন সাজে

দাও না বাবা পোশাক কিনে আসছে দুর্গা মা যে।

আসছে গণেশ সরস্বতী আরও দু'ভাই বোন

ত্রিনয়নের অপার জ্যোতি ভরবে সবার মন।

ভরবে যখন কানায় কানায় আনন্দ উল্লাস

মহামারীর বিষম হানায় দু'মুঠো ভাত চাস।

দু'মুঠো ভাত নুনে মেখে হাসি ধরে রাখ

বাবার করুণ মুখটি দেখে এবার পূজো থাক।

এবার আমি কাজ হারালাম কোন দোষে বল মা

পথ রুখে আজ এই দাঁড়ালাম মা তুই ফিরে যা।

মা তুই আছিস রাজার হালে ছেলে পুলে নিয়ে

আমার ঘরে এই আকালে পেট চলে কী দিয়ে?

পেট চলুক আর নাইবা চলুক তোর তো আসা চাই

মেয়ে আমায় পাষান বলুক সাধ্য কিছুই নাই।

সমীরণ সরকার

 



বেরসিক বিড়াল

সমীরণ সরকার

 

ঢ্যাং কুড় কুড়ে নাকুড় নাকুড়

বাজছে কোথায় বাদ্যি,

ব্যাঙ ছানাটা নাচছে তালে

থামায় যে কার সাধ্যি!

পোঁ পোঁ পোঁ পোঁ  করে সানাই

বাজছে দুগ্গা ঘরে,

গান ধরেছে টুনটুনি টা

তার ই তালে সুরে।

হুমদো মুখো কালো বিলু

বাজায় জোরে বাঁশি,

কানে যেতেই কাকের ছানা 

হাসলো বিকট হাসি।

হুলো বেড়াল ধমকে বলে

সবাই খাবে গাঁট্টা, 

কাল রাত্তিরে হয়নি তো ঘুম

মেজাজ আমার খাট্টা!

সোহিনী দাশগুপ্ত


হরেন খুুড়ো

সোহিনী দাশগুপ্ত


সিংহী মামার ভঙ্গী দেখে,

পিছলেছি পা খুব কষে।

হরেন খুড়োর শুনছি নাকি,

জল জমেছে ফুসফুসে!


মস্ত ঝোলা দুলিয়ে কাঁধে,

চিড়িয়াখানার ফটক পার।

খুড়োর আবার মাথার ব্যামো,

দুই চোখেতে দেখেন চার।


শিম্পাঞ্জির ডিগবাজিতে

ভিমরী খেলেও বিশ্বজয়...

লোক ডেকে কন,"শোনো... শোনো...

মাথার ব্যামো আমার নয়।"


হৃদপিণ্ডে চারটে ফুটো,

কিডনি গেছে চুরি,

লিভারটাও বেশ বেড়েছে;

তাই না এতো ভুঁড়ি!


ভাগ্য রেখায় চির ধরেছে,

বন্দি হাতের মুঠো।

এ জগতে এমন মানুষ,

আর পাবেনা দুটো।

কপিলদেব সরকার


জোনাকি

কপিলদেব সরকার


"আকাশটা যদি আজ কালো হয় 

জোনাকিরা দেখা দিলে ভালো হয়"


―এই ভেবে মাঝরাতে টুপটাপ

পায়ে পায়ে খাট ছেড়ে চুপচাপ


আলগোছে নেমে এল পল্টন 

এক হাতে তুলে নিল লণ্ঠন 


সলতেটা দিল তার উস্কে 

ডেকে নিল হুলো কুট্টুস-কে 


বেড়ালের চোখ জ্বলে আঁধারে 

থোকা থোকা ফুল দোলে বাদাড়ে 


মিটমিটে তারারাও ফুটেছে 

সাবধান! পেঁচা ডেকে উঠেছে!


বুড়ো আমগাছটার কোটরে 

এইবারে হাত রেখে ওঠো রে!


এক ডালে দোল খাবে লণ্ঠন

পাশে ব'সে হুলো আর পল্টন 


ওপারেই মাঠের তেপান্তর 

আয় হুলো ভাই― তোর গান ধর 


আজ মনে হয় অমাবস্যা

চাঁদ নেই, বিলকুল ফরসা


আকাশটা ঝুলকালি মেখেছে

কেউ বুঝি আমাদের দেখেছে?


― দেখবে কি করে? এ তো স্বপন‌ই

সুকুমার, লীলা রায় পড়নি?


কি মজার সেই সব গল্প

ছমছমে রাত, নয় অল্প


এখনও সে-দিন গেল গোনা কি?

আমি জাগি, আর জাগে জোনাকি!

বিপ্লব দাস


অসুরদলনী

বিপ্লব দাস


প্রতি বছর অঞ্জলি দিই ডাকি তোকে গভীর মনে

কর মা কৃপা একটুখানি বলছি আমি আজ গোপনে

ফি বছরই একই অসুর মারিস মা তুই ত্রিশূল হাতে

এবার তবে বদল আসুক খোঁজ দেব আয় আমার সাথে

স্কুল-কলেজে, অফিস পাড়ায়, হাট-বাজারে, সিগনালেতে

এদের পাবি সকল সভায়, খেলার মাঠে, আদালতে...

কয়েকজনকে চেয়ার টেনে আছড়ে ফেল মা মাটির 'পরে

কয়েকজনকে নিলডাউনে রাখিস মা তুই কানটা ধরে

কয়েকজনকে জোলাপ খাওয়া, কন্টিনিউয়াস সুড়সুড়ি দে

কয়েকজনের হাত পা বেঁধে বিরিয়ানি-চাব রাখ সাজিয়ে

রাতেরবেলায় হানাবাড়ি... আটকে রাখ মা কয়েকজনে

আর কিছুকে একনাগাড়ে বসিয়ে রাখ মা উস্ট্রাসনে

কয়েকজনার চোখের নিচে লাগিয়ে দে মা লঙ্কাবাটা

কয়েকজনকে জষ্টীমাসে পাঁচ কিমি তক রাস্তা চাটা

বেশকিছুকে জলবিছুটি লাগিয়ে দে মা বেশটি করে

বাঁচল যারা কাঠপিঁপড়ে ছড়িয়ে দিস মা শরীর জুড়ে

কিন্তু ওদের মারিসনে মা তোর কছেতেই থাকবে পরে

অসুর যেমন চালাক ভীষণ পাচ্ছে পুজো ফি বছরে

দে মা কথা তবেই তবে আসছে বছর আবার হবে

কৈলাসেতে ধরনা দেবো প্রমিস যদি ভাঙিস তবে।

রবীন বসু


দুর্গোৎসব

রবীন বসু


আজ আকাশে নতুন আলো নতুন দিনের ডোর

চক্ষু মেলে দেখছে খোকা দেখছে নব ভোর।

খুকু দেখে আলোর বেণু আকাশ পটে লিখা

সবুজ মাঠ ভরা হাসি সাদা কাশের শিখা।

পুকুরগুলো ভরে গেছে পদ্ম শতেক দল

শিউলি ফুল ঝরছে দেখি রাতে শিশির জল।

উৎসব ওই এসে গেল সাজো সাজো রব

ক'দিন পরে মহালয়া তার পরেই তো সব।


দুর্গা পুজো মহাধূম সারা রাত ধরে

ঠাকুর দেখা রোল খাওয়া রইলো পড়া পড়ে।

এ কটা দিন শুধুই মজা আনন্দ আর খুশি

সারা বছর মনের মাঝে ইচ্ছাটাকে পুষি।

কত স্বপ্ন কত আশা দুর্গোৎসব ঘিরে

প্রতি বছর ঘুরে আসে প্রতি বছর ফিরে।

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়


হেমন্ত 

হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়


সোনার ধানে ভরাট মাঠে

হারিয়ে যায় মন তো

                           হেমন্ত।


গাছের পাতায় পড়ছে শিশির

সাবধান, ঠাণ্ডা নতুন তো

                                   হেমন্ত।


গা শীত শীত করছে কেমন

সময়টা কী বলুন তো?

                              হেমন্ত।

প্রতি মাসের জনপ্রিয় লেখা